দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপালের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে গত কয়েকদিন ধরে অবিরাম বর্ষণ থেকে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধস চলছে। ভয়াবহ এ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০ জনে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া রেকর্ড-ব্রেকিং বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে এই ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আরও ৪২ জন এখনও নিখোঁজ থাকায় উদ্বেগ বেড়েছে।
নেপাল পুলিশ জানিয়েছে, এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ১০১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে ৩ হাজার ৬৬১ জন মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ সম্পর্কে এখনও কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
আবহাওয়া পূর্বাভাস বিভাগ আগেই সতর্কবার্তা জারি করেছিল এবং পানিবিদ্যা ও আবহাওয়া অধিদপ্তরও আবহাওয়ার পরিবর্তন ও দুর্যোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছিল। তবে তাদের পূর্বাভাস ও সতর্কতা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।
আবহাওয়া বিভাগের তথ্য কর্মকর্তা বিভূতি পোখারেল জানান, আমরা আগেভাগেই সবাইকে সতর্ক করেছি এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়ে সময়মতো তথ্যও দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেই বার্তাগুলো যাদের কাছে পৌঁছানো দরকার ছিল, তাদের কাছে ঠিকমতো পৌঁছেনি।
অন্যদিকে, কাঠমান্ডু পোস্ট এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্ষার মৌসুমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আগে যেখানে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বর্ষা শেষ হয়ে যেত, সেখানে ২০১৩ সাল থেকে বর্ষার স্থায়িত্ব অক্টোবর পর্যন্ত বেড়েছে। এই প্রবণতা শুধু নেপালেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার এই অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিচ্ছে। অল্প সময়ে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত বা দীর্ঘস্থায়ী খরার মতো চরম আবহাওয়া নেপালে গত দেড় দশক ধরে বড় ধরনের দুর্যোগের সৃষ্টি করেছে। এটা হাজার হাজার মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তাদের জীবিকা হুমকির মুখে ফেলেছে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ডা. ইন্দিরা কান্ডেল মনে করেন, দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য সঠিক সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বাভাস দেওয়া হলেও, মূল সমস্যা হলো সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে ব্যবহার করে।
নেপালের অনেক জেলায় এখনও পানি বেড়ে চলেছে এবং ভূমিধসের কারণে বাড়িঘর, যানবাহন, সেতু এবং মহাসড়ক ধ্বংস হয়ে গেছে। কাঠমান্ডু উপত্যকাসহ আরও বেশ কিছু এলাকা সম্পূর্ণভাবে পানির নিচে তলিয়ে গেছে, যা উদ্ধার কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।