আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান কল্লোলের ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম আর দূর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কোন রাহু শক্তি এই তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মন্তব্য করে দ্রুতই তদন্ত শেষ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: সোহেল রানা। মৌদুদুর রহমান কল্লোল বর্তমানে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ-এনায়েতপুর ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে ১৯৯৮সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি উপ-সহকারী পদে যোগ দেন মৌদুদুর রহমান কল্লোল। পরে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান। কপাল খুলে যায় এই কর্মকর্তার। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি যখন যে ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করেন তখন সেখানে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। তার কাছে জমি খারিজ, খাজনা, নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত যে কোনো কাজ করতে গেলেই দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা। আর চাহিদা মাফিক টাকা না দিলে হয় না কোন কাজ। শিকার হতে হয় নানা রকমের হয়রানীর। এমনকি টাকা দিলে হয় মৃত ব্যক্তির নামেও জমির খারিজ। শুধু তাই নয় টাকার বিনিময়ে সরকারি জমি ব্যক্তি নামে নামজারী করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এই ভাবেই তিনি কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, নওগাঁ শহরের স্টাফ কোয়াটারের বিপরীতে প্রায় ৩কাঠা জমি ওপরে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ৫তলা বাড়ি। সেই জমির দাম প্রায় ৭০লাখ টাকা। আর কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ভবন। এছাড়াও সদর উপজেলার চকদেব মৌজায় ২৫দশমিক ৩০৫ শতক জমি যার দাম প্রায় ৩কোটি টাকা। চকপ্রাচী মৌজায় আছে ৪১দশমিক ৫শতক যার দাম প্রায় সাড়ে ১২লাখ টাকা। চকবাড়িয়া মৌজায় ৮দশমিক ৩৫শতক জমি যার দাম প্রায় ৭৫লাখ টাকা। খাগড়া মৌজায় রয়েছে ২৩৪দশমিক ৫শতক যার দাম প্রায় ৪কোটি টাকা। বাঙ্গাবাড়িয়া মৌজায় রয়েছে ৮দশমিক ২৫ শতক যার দাম প্রায় ১কোটি টাকা। আরজি-নওগাঁ মৌজায় রয়েছে ১৭দশমিক ৬৬শতক জমি আছে যার দাম প্রায় ১কোটি টাকা। এছাড়াও শহরের নওজোয়ান টাওয়ারে তার স্ত্রীর নামে প্লট আকারে জমি রয়েছে যার দাম প্রায় ১৩লাখ টাকা।
নওগাঁর সদর উপজেলার ফতেপুর বাজারের চা বিক্রেতা ভুক্তভোগী আলম হোসেন বলেন, ৪শতক জমি খারিজ করতে গেলে কল্লোল তার কাছে থেকে ৫হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে মাত্র ৩শত টাকার চেক দিয়েছেন। কল্লোল যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন সামনে একটা কৌটা রাখতেন। সেই কৌটার মধ্যে টাকা ছেড়ে দিতে হতো। তারপর তিনি চেক দিতেন।
ইকরতাড়া এলাকার রাজু সরদার বলেন ১০শতক জমি খারিজ করতে আসলে ১৩হাজার টাকা নিয়ে চেক দিয়েছে ১৮০ টাকার। টাকা বেশি নেওয়ার বিষয়ে কিছু বললে খারিজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতেন কল্লোল। শুধু আমি না যে কেউ তার কাছে জমির জন্য কোন কাজে গেলে তার সাথে এমন করতেন তিনি। এমন শত শত অভিযোগ রয়েছে কল্লোলের বিরুদ্ধে।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: সোহেল রানা বলেন, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান কল্লোলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত একজন সিনিয়র সহকারী কমিশনারের মাধ্যমে তদন্ত চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন যেহেতু অভিযোগটি একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এবং অভিযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই তদন্তের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তি যত বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন তদন্তে কোন কিছুই প্রভাব ফেলতে পারবে না। আশা রাখি দ্রুতই তদন্ত সম্পন্ন হবে। আর তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য গত ১৮আগস্ট তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো: গোলাম মওলার কাছে বিভিন্ন দাবি নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন নওগাঁর বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কল্লোলের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম আর সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ তুলে তার বিচারসহ অপসারণ দাবী করে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে নওগাঁ পৌরসভা-চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পদে কমর্রত মৌদুদুর রহমান কল্লোলকে গত ১৯আগষ্ট মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ-এনায়েতপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলী করা হয়।