সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক, সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও জনপ্রিয় তরুণ রাজনীতিবীদ দাউদার মাহমুদকে দল থেকে বহিষ্কারে উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এর কারণ যখন বিএনপির ক্রান্তিকাল তখন শক্ত অবস্থানে বিএনপির হালধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন দাউদার মাহমুদ। ক্রান্তিকালে হামলা-মামলার শিকার হবার ভয়ে সিংড়ার বিএনপির কিছু নেতা হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতো। এমনকি নিজেকে বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেও দ্বিধা করতো তারা। কিন্তু দাউদার মাহমুদ কখনই হাত পা গুটিয়ে বসে থাকেনি। তিনি সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে শক্ত অবস্থানে সিংড়ায় বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন। যে কারণে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির হাইকমান্ড নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে সংসদ সদস্য পদে দাউদার মাহমুদকে দলীয় মনোনয়ন দেন। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দাউদার মাহমুদ বিপুল ভোটে জয়লাভ করতো। সিংড়ার বিএনপির দুঃসময়ের কান্ডারী হিসেবে সংগঠনকে শক্তিশালী রাখতে যা করার প্রয়োজন ছিলো তা তিনি করেছেন। প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ২০০৮, ২০১৫, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে রাজনৈতিক মামলায় কারাভোগ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে অনেক সময় আদালতের বারান্দায় সময় কাটে দাউদার মাহমুদের। হামলা-মামলা ও জেল-জুলুমও তাকে দাবিয়ে রাখতে পারিনি। সিংড়ার সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আস্থার ঠিকানাই ছিলো দাউদার মাহমুদ। এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দল থেকে বহিষ্কার করার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
দাউদার মাহমুদ ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি সিংড়া গোল-ই-আফরোজ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হয়, এরপর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক হয়ে আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। সে কারণে উপজেলা ছাত্রদলের পরপর দুইবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ছাত্ররাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এরপর বিএনপির রাজনীতিতে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলো। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে এলাকায় শান্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকেন তিনি। যে কারণে এলাকায় বিএনপির ভাবমূর্তি ভালো বলে এলাকাবাসীর কাছে প্রশংসিত হয়ে উঠে।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মোটরসাইকেল শোডাউন করার অভিযোগ এনে গত ২০ সেপ্টেম্বর দাউদার মাহমুদকে বহিষ্কার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি।
এবিষয়ে দাউদার মাহমুদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনেই রাজনীতি করে আসছি। মিথ্যা তথ্যের কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেদিন আমি কোনো মোটরসাইকেল শোডাউন করিনি। একটি ইউনিয়ন বিএনপির জনসভায় আমাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিলো, মাইক্রোবাসে গিয়ে সেখানে আমি বক্তব্য দিয়েছি। আমি দলীয় সিদ্ধান্তকে সবসময় সম্মান জানাই। তবে আমি বিএনপির হাইকমান্ডের শরণাপন্ন হবো।
পৌর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক ফরহাদ আলী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলে আমার মামলার যাবতীয় খরচ ও সংসার খরচ বহন করেছেন দাউদার মাহমুদ। শুধু আমি নয়, দলের দুঃসময়ে সকল নেতাকর্মীর মামলার খরচ বহন করে দলকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া পৌরসভার কাউন্সিলর বাবুল হোসেন বলেন, দাউদার মাহমুদ দলের জন্য অসংখ্যবার হামলা-মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তিনি বিএনপির একজন পরিক্ষিত ও নির্যাতিত নেতা। দাউদার মাহমুদের মতো নেতাকে সিংড়ার বিএনপিতে অনেক প্রয়োজন।
উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আলহাজ্ব এমএ মালেক বলেন, বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে দলের ক্রান্তিলগ্নে দাউদার মাহমুদের নেতৃত্বে সিংড়ায় বিএনপির মিটিং মিছিল হয়েছে। তখন সিংড়ার বিএনপির অনেক নেতা ঢাকা ও নাটোরে বসে রাজকীয় জীবনযাপন করেছে। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দেশের অনেক জায়গায় যখন মিছিল হয়নি তখনও দাউদার মাহমুদ প্রতিদিন সিংড়ায় মশাল মিছিল ও এক দফা দাবির মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্ব ও আন্দোলনে খুশি হয়ে বিএনপির হাইকমান্ড তাকে পদোন্নতি দিয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়। বিষয়গুলো দলের হাইকমান্ড বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আশা করছি।
ডাহিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক পিএম ইব্রাহিম হোসেন বলেন, দাউদার মাহমুদ সিংড়ার বিএনপির ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে দাউদার মাহমুদের নেতৃত্বেই দলের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তিনিই ছিলেন আন্দোলন-সংগ্রামের প্রধান সিপাহসালার।
সিংড়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব তায়েজুল ইসলাম বলেন, দাউদার মাহমুদ ২৯ বছর ধরে ছাত্রদল ও বিএনপির রাজনীতি করে আসছে। তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক। তিনি দুঃসময়ে বিএনপির সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার বহিষ্কারে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে দাউদার মাহমুদের বহিষ্কারদেশ প্রত্যাহারের দাবি আমাদের।
সিংড়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নাটোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খান মো. আলী আজগর বলেন, দাউদার মাহমুদ সিংড়ার বিএনপির সবচেয়ে জনপ্রিয়তা নেতা। বিগত দিনে দলের দুঃসময়ে কেউ আক্রান্ত হলে তিনি উদ্ধার ও চিকিৎসা করেছেন। নেতাকর্মীদের নামে রাজনৈতিক মামলা হলে সকল খরচ তিনি ব্যক্তিগতভাবে বহন করেছেন। সিংড়ার বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে স্বপদে বহালের জন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে দাবি করছি।
এ জাতীয় আরো খবর..