পর্ব-২)
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান কল্লোলের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের তদন্তে নেমেছে জেলা প্রশাসন। জমি সংক্রান্ত খাজনা-খারিজসহ বিভিন্ন কাজে ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ পেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন সিনিয়র সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। ইত্যেমধ্যে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলেও জানান নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: সোহেল রানা।
সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নওগাঁ “সদর উপজেলার মধ্য-দূর্গাপুর গ্রামে ঈদগাহের ২৪শতাংশ জমি খারিজ করতে ৫৫ হাজার টাকা ঘুষ নেয়া”র বিষয়ে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর জেলা জুড়ে আলোচনায় আসেন নওগাঁর ভ’মি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান কল্লোল। এরপর একের পর এক ঘুষ বাণিজ্যের তথ্য বের হয়ে আসছে। কল্লোল এতো প্রভাবশালী ভূমি সহকারী কর্মকর্তা যে, পূর্বে কোন ডিসি কিংবা কোন উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করার সাহস পায়নি। বিশেষ করে নওগাঁর সাবেক এক জেলা প্রশাসকের প্রশ্রয় আর তৎকালীন সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কল্লোল আরো বেশি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এছাড়া কল্লোল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সমিতির কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় কল্লোল কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না। এমন প্রভাব খাটিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে করেছেন সম্পদের পাহাড়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রভাবশালী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হতো। নতুন বাংলাদেশে এমন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চায় নওগাঁর শত শত ভুক্তভোগীরা।
গত ১৮আগস্ট নওগাঁর সদ্য বদলী হওয়া জেলা প্রশাসক মো: গোলাম মওলার কাছে বিভিন্ন দাবি নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। এই স্মারকলিপি দেয়ার নেতৃত্ব দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁর সমন্বয়ক সাকিব, রিয়াদসহ অন্যরা। এসময় শিক্ষার্থীরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কল্লোলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে তার বিচারসহ অপসারণ চায়। এসব অভিযোগে ভিত্তিতে নওগাঁ পৌরসভা-চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পদে কমর্রত মৌদুদুর রহমান কল্লোলকে গত ১৯আগষ্ট মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ-এনায়েতপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলী করা হয়।
নওগাঁর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মিজানুর রহমান বলেন, জেলার সবটি ভূমি অফিস দূর্নীতির আখড়া। ঘুষ ছাড়া কেউ কোন সেবা দেন না। এসব সিন্ডিকেটের মাথা হলেন কল্লোল। কল্লোলের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকায় দূর্নীতিগ্রস্থ এই কর্মকর্তার তদন্ত সাপেক্ষে অপসারণ চাওয়া হয়। অনতিবিলম্বে তার অপসারণ করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে মর্মে হুশিয়ারী দিলে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো: গোলাম মওলা কল্লোলকে মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ-এনায়েতপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলী করেন। সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে কল্লোলের মতো ঘুষখোর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তরমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ রইলো।
সদর উপজেলার ফতেপুর বাজারের চা বিক্রেতা ভুক্তভোগী আলম হোসেন চার শতক জমি খারিজ করতে ফতেপুর বাজারে অবস্থিত বোয়ালিয়া-তিলকপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কল্লোলের কাছে যান। কল্লোল তার কাছে থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে মাত্র তিনশত টাকার চেক দেন।
ইকরতারা গ্রামের বাসিন্দা ও ফতেপুর বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী রাজু সরদার জানান, তার এক চাচার ২১সাল পর্যন্ত খারিজ সম্পন্ন রয়েছে। তিনি বিদেশ যাওয়ার জন্য ১০শতক জমি বিক্রি করবেন। সেই জমি কেনার জন্য নতুন করে খারিজ করতে ফতেপুর ভূমি অফিসে কল্লোল সাহেবের কাছে এলে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট লাগবে, এটা লাগবে, ওটা লাগবে বলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি শুরু করেন। এরপর ১৩ হাজার টাকা নিয়ে মাত্র ১৮০ টাকার চেক দেন তাকে।
নওগাঁ পৌর সভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলম মন্ডল জানান, ফতেপুর ভ’মি অফিসে তার সোয়া দুই শতক জমি খারিজ করতে এলে তার কাছ থেকে ৫০হাজার টাকা ঘুষ চান কল্লোল। কল্লোল আ’লীগ সরকারের লোকজনদের ছত্রছায়ায় ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার বিরুদ্ধে অবৈধ্য সম্পদ অর্জেনের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: সোহেল রানা জানান, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান কল্লোলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত একজন সিনিয়র সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদনে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।