সরকার পতনের পর যত্রতত্র পদত্যাগের দাবিতে রীতিমতো বিপাকে পরেছেন নওগাঁর এমপিওভুক্তসহ কিছু সরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখতে কেউ কেউ পদত্যাগ করছেন আবার কেউ কেউ সবকিছু নিরবে মুখবন্ধ করে সহ্য করে যাচ্ছেন। এতে করে বিপাকে রয়েছেন তারা। এর সমাধান কি? তারা যাবেনই বা কোথায়?
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে পতন হয় আওয়ামী-লীগ সরকারের। ছাত্রজনতার এই শক্তিকে পুঁজি করে স্থানীয় কিছু স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী ব্যক্তি এই কাজগুলো করে যাচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন কেউ কেউ। তারা আরও বলছেন, তাদের স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েসহ তাদের বন্ধু-বান্ধবরা মিলে এই কাজগুলো করছে। তাদের ভয়ে কোথাও অভিযোগ করাতো দূরের কথা কেউ মুখ খুলতেও পর্যন্ত সাহস পাচ্ছেন না। নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন সবকিছু। সরকার পতনের পর গত কয়েক দিনে জেলার অর্ধশতাধিকের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তারা প্রধান শিক্ষকসহ অল্পসংখ্যক সহকারী শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেন। এরমধ্যে তাদের হামলায় কেউ কেউ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানা যায়। তাদের দাবি বিগত সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ফি বেশি আদায় করা হয়েছে। তাই তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা গিয়েছে জেলায় এই পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন নিয়োগ টাকা ছাড়া হয়নি এটা যেমন সত্য তেমনি সত্য নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা তাদের হাতের একটি পুতুল। দেশের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যে কেউ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হন। তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হন প্রধানরা। যেই প্রতিষ্ঠান প্রধান এর বিরোধিতা করে তাকে পরতে হয় পরিচালনা কমিটির রোষানলে। এতে করে অপমান অপদস্ত করাসহ বন্ধ হয় এমপিও। তখন বাধ্য হয়েই তাদের এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের কার্যকলাপে সহযোগিতা করতে হয়। এই পরিচালনা পর্ষদ বাতিল চায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এ পর্যন্ত জেলায় গত কয়েক দিনে পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৮জন শিক্ষককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন তারা। এই শিক্ষকরা হলেন, নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নাজমুল হাসান, উপাধ্যক্ষ মুহিদুল হাসান, আস্তান মোল্লা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ, নওগাঁ সদরের কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজাহার ও সহকারী প্রধান শিক্ষক, বদলগাছী উপজেলার কোলা বিজলি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) মো. নুর মোহাম্মদ, পোরশা উপজেলার নীতপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন। এছাড়াও নওগাঁ সরকারি ডিগ্রি কলেজের ৫জন শিক্ষককের পদত্যাগ দাবি করেন। তারা আগামী ৩দিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে শিক্ষার্থীদের জানান। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারীদের পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ বলেন, বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করে আমাদের প্রতিষ্ঠানে আসতেছে। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নে আমরা বিবৃত। তারা বলছেন, বিগত সরকারের শাসনামলে আপনি এই কয়টা নিয়োগ দিয়েছেন। তারা এতো এতো টাকা দিয়েছে। এই টাকার হিসাব দেন। তারা তো জানেনা এখানে আমার বাধ্য হয়েই এসব করি। আমরা চাই কমিটি প্রথা বাতিল করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি ভাবে সকল নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হোক। এতে করে যেমন কমিটির দৌরাত্ম্য কমে যাবে তেমনি মেধাবীরা চাকরি পাবে।