মা মনসা হিন্দুর্ধমের লৌকিক সর্পদেবী। হিন্দু পুরানের দেবীদের মধ্যে মনসা অগ্রগন্য। মধ্যযুগের মা মঙ্গলকাব্য থেকে দেবী মনসার পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়াও সর্পদেবী হিসেবে মনসার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। পুরাণকথা-মা মনসা অত্যন্ত প্রসিধ্যদেবী। ভক্তদের কাছে মা মনসা বিষহরি নামে পরিচিত। তিনি জগৎগৌড়ী নিত্যা নামেও পরিচিত। বর্ষাকালে সাপের বিচরন বেরে যায়,তাই সর্প দংশন প্রতিরোধ করতে ও সাপের বিষ হতে রক্ষা পেতে শ্রাবন মাসের সংক্রান্তিতে মা মনসার পুজা করা হয়। এছাড়াও ধন সম্পদ,সন্তান লাভের জন্যও মা মনসা পুজা করে থাকে হিন্দুধর্মালম্বীরা।
হিন্দুধর্মালম্বীরা পঞ্জিকামতে শনিবার (১৮ আগস্ট)শ্রাবন মাসের সংক্রান্তির দিন দিনব্যাপী দেশের প্রতিটি হিন্দুসম্প্রদায়ের পরিবারের পাশাপশি আদমদীঘি উপজেলা সদরের চড়কতলা গ্রামের আড়াই শতাধিক বাড়ী সহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আরো প্রায় দুই হাজারের অধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি বাড়িতে মা মনসা পুজা অনুষ্ঠিত হয়। আদমদীঘি উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক মিহির কুমার সরকার বলেন,সর্পজাতির পিতা কশ্যপমুনির সন্তান হিসেবে মা মসনাকে কল্পনা করেন অনেকেই।
মূলতঃ মঙ্গল কাব্যে বলা হয়েছে যে,মনসার পিতা হলো দেবাদিদেব শিব। পুরোহিত সুকুমার চৌধরী এ প্রতিনিধিকে বলেন মনসা বিজয় কাব্যে লেখা আছে যে,একবার নাগমাতা কদরু একটি বালিকার মূর্তি নির্মান করেছিলেন, সেই মূহুর্তেই মহাদেব শিবের রশ্মি নির্গত হলে তা থেকে মনসার জন্ম হয়েছিল। এরপর নাগরাজ বাসকী তাকে ভগিনী বলে শিকার করে নেয় এবং ছোট থেকেই মা মনসা দেবীকে লালন পালন করে এসেছে। দেবীরুপে প্রাধান্যলাভ করতে মনসাকে বেশ সংর্ঘষ করতে হয়েছিল। দেবাদিদেব মহাদেব বলেছিল যদি চাঁদসওদাগর তার পুজা করতে রাজি হয় তবেই পৃথিবীতে মনসা প্রচলিত হবে। কিন্তু শিবভক্ত চাঁদসওদাগর কোন ভাবেই মনসাকে পুজা করতে রাজি হয়না। ফলে মা মনসা পুজা আদায়ের জন্য চাঁদসওদাগরের ৬ পুত্রকে হত্যা এবং ধনসম্পদ থেকে নিঃস্ব করেন। বেহুলা-লক্ষিন্দর কাহিনী এর অংশ। কিন্তু লক্ষিন্দরের স্ত্রী বেহুলা ছিল মনসার পরমভক্ত। অনেক চেষ্টা করে বেহুলা চাঁদসওদাগরকে মনসা পুজা করাতে রাজি করেন। চাঁদসওদাগর মনসার দিকে না তাকিয়ে বামহাত দিয়ে ফুল ছুরেদেন মনসার দিকে। মনসাদেবী তাতেই খুশি হয়ে লক্ষিন্দর সহ চাঁদ সওদাগরের ৬ পুত্রকে জীবিত করেন এবং সব ধনসম্পদ ফিরিয়ে দেন। এরপরই মনসা পুজা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আর তখন থেকেই প্রতি বছর হিন্দু সম্প্রদায় শ্রাবন মাসের শেষদিন স্ক্রংান্তিতে মা মনসা পুজা করে আসছে।