বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষক সেলিম হোসেন (৩৫) নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জন আসামির নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৫০ জনকেও আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দিনগত রাতে বগুড়া সদর থানায় নিহতের বাবা সেকেন্দার আলী বাদী মামলাটি দায়ের করেন।
নিহত স্কুল শিক্ষক শিবগঞ্জ উপজেলার পালিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা ও লাইট হাউজ স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ছাত্রদের ডাকা এক দফা দাবিকে সমর্থন জানিয়ে স্কুল শিক্ষক সেলিম গত ৪ আগস্ট শহরের সাতমাথায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় বগুড়া পৌরসভার তিন কাউন্সিলর মতিন সরকার, আমিনুল ইসলাম ও আরিফ ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্কুল শিক্ষক সেলিমকে কুপিয়ে হত্যা করে। বাকি আসামিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেখানে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালায়।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি টি জামান নিকেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম, সাগর কুমার রায়, এ কে এম আসাদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হাসান, বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা, সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক দুই সভাপতি আল রাজি জুয়েল ও নাঈমুর রাজ্জাক, সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক মাশরাফি হিরো ও অসীম কুমার রায়, শহর আওয়ায়ী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ, বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান, চেম্বারের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথায় স্টেশন সড়কে আইএফআইসি ব্যাংকের সামনে আওয়ামী লীগের সাবেক ওই দুই সংসদ সদস্যসহ সাত নেতার নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় তারা ককটেল ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেন। হামলায় শিক্ষক সেলিম হোসেন রক্তাক্ত হন। এ ছাড়া বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর আবদুল মতিন সরকার ও আমিনুল ইসলাম রামদা দিয়ে কুপিয়ে এবং কাউন্সিলর আরিফুর রহমান হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে তাকে জখম করেন। পরে অন্য হামলাকারীরা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
মামলায় আইনি সহায়তাকারী আইনজীবী ও বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল বাসেত বলেন, ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে সেলিম হোসেনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে এই দুজনকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ নিয়ে চার দিনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হলো।