সাঁওতাল হত্যার আসামী সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলসহ সকল আসামীদের গ্রেফতারের দাবি আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন।
এ উপলক্ষে শনিবার ( ১০ আগস্ট) গাইবান্ধা নাট্যসংস্থার সামনে প্রতিবাদী সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচী পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘আদিবাসীদের অস্তিত্ব সংরক্ষণ ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সামিল হই”।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের প্রতিশ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর সাঁওতাল-বাঙালি নারী-পুরুষরা তাদের অধিকার ও দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বর্ণাঢ্য মিছিল গাইবান্ধা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সাঁওতাল নারী-পুরুষরা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী পোষাক, বাদ্যযন্ত্র ও তীর-ধনুকসহ অংশগ্রহণ করে। আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ ও নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ, গাইবান্ধার যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচির পালন করা হয়।
সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক মাহামুদুনবী টিটুল, পরিবেশ আন্দোলন-গাইবান্ধার সভাপতি ওয়াজিউর রহমান রাফেল, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, জনউদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর কবির তনু, মানবাধিকার কর্মী গোলাম রব্বানী মুসা,অঞ্জলী রানী দেবী, জেলা বিএনপি’র সদস্য সাহেদ হোসেন, আদিবাসী নেতা সুফল হেমব্রম, থমাস হেমব্রম, সুচিত্রা মুরমু তৃষ্ণা, কাজী আব্দুল খালেক, নারী নেত্রী নাজমা বেগম, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের সাবেক সভাপতি সুনিল রবিদাস, ভূমি উদ্ধার কমিটির নেতা ময়নুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী মনির হোসেন সুইট, এ্যাড: মোহাম্মদ আলী প্রামানিক, এ্যাড: কুশালাশীষ চক্রবর্তী, এ্যাড: ফারুক কবীর প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাঁওতাল হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। এমন একটি বিভৎস, অমানবিক ঘটনার আজও বিচার কাজ শুরু হয়নি। সাঁওতাল হত্যার আসামী সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলসহ সকল আসামীদের গ্রেফতারের দাবী করে। সাঁওতাল হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুওে বেড়াচ্ছে। তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার হয় নাই। উপরন্তু মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যু স্বপন শেখ ও আতাউর রহমান সাবু নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা নতুন করে সাঁওতালদের বাড়ী, কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর ভাংচুর, মারধর, ভয়ভীতি ও জমি দখল করছে। এ নিয়ে সাঁওতালদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়াও আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি; সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠনেরও দাবী জানানো হয়।
সারাদেশে সাঁওতালসহ আদিবাসী জনগোষ্ঠী মানবাধিকার এবং জীবন মানের সার্বিক দিক দিয়ে আজও নানাভাবে বঞ্চিত এবং সে কারণেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর থেকে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত জনগোষ্ঠী। সমতলের আদিবাসীরা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। ‘শুধু আদিবাসীই বিলুপ্ত হচ্ছে না, তাঁদের সংস্কৃতি, ভাষাও বিলুপ্ত হচ্ছে’। এরা বাংলাদেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী। অধিকাংশই ভূমিহীন, তাঁদের হাতে ভূমি নেই। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ক্রমাগত সাঁওতালসহ আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সাঁওতালরা তাদের অধিকার ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত।