সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন আজ রবিবার (৪ আগস্ট) সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে ফেনীতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। পাবনা ও রংপুরে নিহত হয়েছে চারজন করে। তিনজন করে নিহত হয়েছে মাগুরা, রংপুর, ভোলা ও বগুড়ায়। দুজন নিহত হয়েছে মুন্সীগঞ্জে। জয়পুরহাট, কুমিল্লা, বরিশাল ও সিরাজগঞ্জে নিহত হয়েছেন একজন করে।
মুন্সীগঞ্জ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে মুন্সিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে সাত জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল।
রংপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। রংপুর নগরীর পায়রা চত্বরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
ফেনী : অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে জেলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. আসিফ ইকবাল।
মাগুরা: পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। মেহেদী হাসানের বাড়ি পৌরসভার পারনান্দুয়ালী এলাকায়।আজ বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা: সহিংসতায় পাবনাতেও মারা গেছেন দু’জন। জেলা শহরের চাতিকমোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করে। এ সময় বিরোধী পক্ষের সাথে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হয় অন্তত ৩০ জন। আর মারা যায় দু’জন। প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এসএম রুমি।
বগুড়া: বগুড়া সদর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, পুলিশের গুলিতেই তারা নিহত হয়েছেন। দুজনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবির আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। জানা যায়, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার সদরের বড়গোলা এলাকায় বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলিতে আহত হয় আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক যুবক। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মনিরুল ইসলাম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে মারা যান। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন শফিউল আজম। এছাড়া, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ আহত হয়ে ১১ জন ভর্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে ২০ থেকে ২৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। অভিযোগ, এ সময় এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার নাম আবদুল লতিফ বলে জানা গেছে। তার বাড়ি শহরের গয়লা এলাকায়।