বিশ্বজুড়ে তাপপ্রবাহ, ঝড়, অতিবর্ষণ ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে। চলমান এই পরিস্থিতিকে ‘চরম তাপ মহামারি’ বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, পৃথিবীজুড়ে এখন তাপ মহামারি শুরু হয়েছে।”
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, “সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বাড়ছে। অনেক অঞ্চলে প্রায় নিয়মিত তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গরমের নাভিশ্বাস উঠছে জনগণের।”
“বর্তমানে যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, সেটি কোনো স্বাভাবিক আবহাওয়াগত পরিস্থিতি নয়, আমরা বলতে পারি— পৃথিবীজুড়ে এখন তাপ মহামারি শুরু হয়েছে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা কোপারনিকাস ক্লাইমেট অবজারভেটরি সম্প্রতি জানিয়েছে, গত ২১, ২২ এবং ২৩ জুলাই ছিল বিশ্বের ইতিহাসের উষ্ণতম দিন। এই তিনদিনের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ ছিল ২২ জুলাই। এ দিন বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল রেকর্ড ১৭ দশমিক ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে কখনও বিশ্বের দৈনিক তাপমাত্রা এই পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, “সম্প্রতি আমরা বিশ্বজুড়ে গরম বাড়তে থাকা নিয়ে কথা বলছি; কিন্তু সমস্যাটি কেবল তাপবৃদ্ধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ঝড়, বন্যা, খরা, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে; সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে…এক কথায় বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকা দিন দিন লম্বা হচ্ছে।”
“এই উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ প্রাকৃতিক নয়, বরং মানুষের একটি রোগ এ জন্য দায়ী। এই রোগের নাম পাগলামি; নিজের একমাত্র আবাস ধ্বংসের পাগলামি। এই পাগলামির কারণে ক্ষতিকর জেনেও কয়লা, তেল ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়াচ্ছে মানুষ, নগরায়নের নামে অরণ্য ধ্বংস করছে।”
“যেহেতু জীবাশ্ব জ্বালানির ব্যবহার কার্বন নিঃস্বরণ ও উষ্ণতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, আমি প্রত্যাশা করছি, জি২০ সহ বিশ্বজুড়ে যত আঞ্চলিক জোট রয়েছে, সেসব জোটের সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতা বৃদ্ধির ইস্যুটি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হবে।”
২০২৩ সালকে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর বলে উল্লেখ করেছিলেন জলবায়ুবিদরা, তবে চলতি ২০২৪ সাল সেই রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে। এ বছরের প্রথম ৭ মাসে বিশ্বের অন্তত ১০টি অঞ্চলে নিয়মিত তাপমাত্রা উঠেছে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি।
জাতিসংগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল— এই ১৯ বছরে তাপপ্রবাহ, বন্যা, ঝড় ও অতিবর্ষণে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৮৯ হাজার মানুষের।
গুতেরেস বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রকৃতি যতখানি দায়ী, তার চেয়েও বেশি দায়ী মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণ। তাই আমরা যদি উদ্যোগী না হই, এই সংকট আপনা-আপনি সমাধান হবে না।”