আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর রাণীনগরে পাঁচ বছরের এক শিশু বলাৎকারের শিকার হলেও সুষ্ঠ বিচার না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের এক সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত আসামী রোহান প্রামাণিক (১৫) কে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এতে করে সঠিক বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশায় রয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
বলাৎকারের শিকার হওয়া শিশুর বাবা উপজেলার আতাইকুলা দক্ষিণপাড়ার আব্দুল আলিমের ছেলে আতিকুর রহমানের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে যে, গত সোমবার (০১জুলাই) দুপুরে বেবি শ্রেণিতে পড়া আতিকুরের ছেলেকে চকলেট দেওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রতিবেশী একই গ্রামের মিথুনের ছেলে রোহান প্রামাণিক তাদের বাড়িতে কৌশলে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর জোরপূর্বক ওই শিশুকে বলাৎকার করে।
এসময় প্রচুর রক্তক্ষরণের যন্ত্রনায় কাতর শিশুর চিৎকার করলে কৌশলে রোহানের পরিবারের সদস্যরা শিশুকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। শিশু বাড়িতে আসার পর বিষয়টি জানান সঙ্গে সঙ্গে শিশুর বাবা আতিকুর বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন।
এরপর ওই দিন রাতেই থানায় এসে শিশুর বাবা আতিকুর বাদি হয়ে রোহানকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। মামলার প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার অবহেলায় কিশোর আসামী প্রকাশ্যে থাকলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ আটক করছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর আদালতের মাধ্যমে বলাৎকার হওয়া শিশুর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
শিশুর বাবা আতিকুর রহমান বলেন আমার একমাত্র ছেলের সঙ্গে হয়ে যাওয়া এমন নির্মম ঘটনায় আমিসহ আমার পরিবারের সবাই হতভম্ব ও ব্যথিত। বিষয়টি আমিসহ আমার পরিবার জানার পর প্রতিবাদ করতে গেলে রোহানের দাদা মাজদুল, মুজু, বাবু, আকলিমা, মুক্তি, মিশু, মিনি, বিথি, শাহিনসহ অন্য পরিবারের সদস্যরা মারপিট করে।
সেই মারপিটের ক্ষত এখনো আমার শরীরে বর্তমান। এছাড়া আমার বোন প্রতিবাদ করতে গেলে তাকেও তারা মারপিট করে। এখনোও তারা বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে। ওই পরিবারের যারা এমন জঘন্য ঘটনাকে আশ্রয় দিয়েছে তাদের প্রতিটি সদস্যদের শাস্তি কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিবাদীর সঙ্গে আঁতাত করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে আজ পর্যন্ত আসামী এলাকায় প্রকাশ্যে থাকলেও আটক করছেন না।
শুধু ম্যানেজই নয় তদন্তকারী কর্মকর্তা বৈরি আবহাওয়ার ওজুহাত আসামীকে পালিয়ে যেতে এবং নিরাপদ স্থানে রাখতে সহায়তা করেছেন বলে তথ্য-প্রমাণ আছে। আর আমি সুষ্ঠ বিচারের আশায় থানার দ্বারস্থ হতে হতে অস্থির হয়ে গেলাম। এছাড়া আসামী রোহান মাদকের সঙ্গে যুক্ত অথচ এমন কিশোরকে আটক করে দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি নিশ্চিত না করে পুলিশ অর্থের বিনিময়ে রোহানকে আশ্রয় দিয়ে আসছে যাতে আগামীতে রোহান এই ধরণের আরো কর্মকান্ড ঘটাতে থাকে। আমি দ্রুত রোহানের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি দাবী করছি।
আসামী রোহানের দাদা মাজদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান মামলার মাধ্যমে আমরা বলাৎকারের বিষয়টি জানতে পারি। আর জন্মসনদ অনুসারে আমার নাতির বয়স মাত্র ৯বছর। আমার নাতির দ্বারা এমন কাজ করা সম্ভব নয়। আর আমরা নই আতিকুরই এসে আমাদের মারপিট করেছে।
রাণীনগর থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: সামির উদ্দিন মোবাইল ফোনে জানান যে, আসামী রোহান পলাতক থাকার কারণে আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। আসামীর পরিবারের সঙ্গে আঁতাত করার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন যে আসামীকে আটকের সকল কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। দ্রুতই আসামীকে আটক করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তরমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।