আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:
সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাসানাইয়া এলাকায় একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার রয়েছেন তিনজন। বুধবার সৌদির স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা নাগাদ আগুনের এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।
নিহতের খবর পাবার পর থেকে এই তিন জনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের মধ্যে আত্রাই উপজেলার তেজনন্দি গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন (৪০), শিকারপুর গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে এনামুল হোসেন (২৫) ও দিঘা স্কুলপাড়া গ্রামের কবেজ আলীর ছেলে শুকবর রহমান (৪০)।
তেজনন্দি গ্রামের ফারুক হোসেনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন, প্রতিবেশি এবং আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীরা ভীড় করে আছেন। গ্রাম জুড়েই যেন কান্না আর শোকের রোল পরে গেছে। ফারুকের স্ত্রী-দুই সন্তানকে যেন কেউ থামাতেই পারছেন না। বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পরছেন।
ফারুকের ভাতিজা পিন্টু আলী জানান, চাচা ফারুক হোসেন গার্মেন্টসে কাজ করতেন। গত ৬বছর আগে ধারদেনা করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু যাবার পর থেকেই সেখানে নানা সমস্যার মধ্যে পরে যায়। গত প্রায় ৮মাস হচ্ছে স্থায়ী ভাবে সোফা তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ মোবাইল ফোনে জানতে পারেন কারখানায় আগুনে ফারুক নিহত হয়েছেন।
উপজেলার দিঘা গ্রামের নিহত শুকবর আলীর জামাই বিদ্যুৎ হোসেন বলেন, তার শ্বশুড় কৃষি শ্রমিক ছিলেন। গত আড়াই বছর আগে একমাত্র সম্বল ১১শতক জায়গা বিক্রি করে তার সাথে ধারদেনার টাকায় সৌদি আরবে যান। এখন পর্যন্ত ধারদেনার টাকা শোধ করতে পারেননি। শুকবরের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে বড় ছেলে শামিম হোসে প্রতিবন্ধি। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বাড়ীর তিনশতক জায়গা ছাড়া আর কোন জমি নেই। কিভাবে শ্বাশুড়ী, শ্যালোকদের নিয়ে চলবেন তা নিয়ে ঘোর বিপাকে পরেছেন। শ্বশুড় শুকবর আলীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
শিকারপুর গ্রামের নিহত যুবক এনামুলের চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান, এনামুল গার্মেন্টস শ্রমিক ছিলেন। অনেকটা সুখের আসায় ঘর বাঁধতে ধারদেনা করে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে কেবলমাত্র রোজগারের টাকায় ধারদেনা শোধ করে ইটের বাড়ী নির্মাণ করছেন। বাড়ীর কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা তার ভাগ্যে সইল না। বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টা নাগাদ আগুনে পুরে মারা যাবার খবর আসে। তখন থেকেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা-মা পাথর হয়ে গেছেন। দ্রুত মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন নিহতদের তিন পরিবার।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, সৌদিতে আগুনে পুরে তিনজনের নিহতের খবর পেয়েছি। তাদের পরিবারের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। এছাড়া নিহতদের মরদেহ দেশে ফেরাতে এবং সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা থাকলে তা সহায়তা করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।