এলজিইডির আওতায় নওগাঁর রাণীনগর ও সদর উপজেলার মধ্যে সংযোগকারী একমাত্র গ্রামীণ মেঠোপথে এখনোও ইটের ছোঁয়া লাগেনি। শুষ্ক মৌসুমে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তির শেষ থাকে না। দুই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিনিয়তই দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। এমন জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ মেঠো পথে দ্রুত ইটের ছোঁয়া চান স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় রাণীনগর উপজেলার বিলবেষ্ঠিত ইউনিয়ন মিরাট। এখনোও এই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তাগুলোয় লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। মিরাটের মফিজের বাড়ির পাকা সড়ক থেকে বিলের মধ্যদিয়ে একটি মাটির গ্রামীণ সড়ক উত্তরপাড়া হয়ে সদর উপজেলার নামা শিকারপুর গ্রামের মধ্যদিয়ে নওগাঁ শহরে প্রবেশ করেছে। প্রায় ১০কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই রাস্তা দিয়ে মিরাট ও শিকারপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের বাসিন্দারা চলাচল করে। এছাড়া এই সড়কের বৈঠাখালি নামক স্থানে রয়েছে মিরাট উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রতিনিয়ত শত শত পথচারীরা এই গ্রামীণ সড়ক দিয়ে নওগাঁ শহরে যাতায়াত করে থাকেন। শুষ্ক মৌসুমে এই মেঠো পথ দিয়ে কোনমতে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে এক হাটু কাঁদা পেরিয়ে চলাচল করতে হয়। এমন সমস্যার কারণে যাতায়াতের জন্য দিনের বেলায় হাতে গোনা কিছু যানবাহন চলাচল করলেও সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত আর কোন যানবাহন চলাচল করে না ফলে হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে রাতে কেউ এই অঞ্চলে আসতে পারে না।
অপরদিকে ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বিখ্যাত এই অঞ্চলের কৃষকরা চলাচলের জন্য কোন আধুনিক সড়ক না থাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে খরচ অনেক বেশি হওয়ার কারণে নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর। দীর্ঘ এই মেঠোপথের কোথাও সড়ক বাতির ব্যবস্থা না থাকার কারণে অনেক সময় ছিনতাইয়েরও ঘটনা ঘটছে। দুটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের বাসিন্দারা ডিজিটাল বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও শহরের সুবিধা গ্রামে পাচ্ছেন না। এমন দুর্ভোগ থেকে দ্রুত মুক্তি চায় এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।
মিরাট উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুকিম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন এই অঞ্চলে আমরা যারা বসবাস করি তারা মনে হয় ছিটমহলের বাসিন্দা। যার কারণে আমরা স্বাধীন ভ’মিতে থেকেও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। বর্ষা মৌসুমে এই মেঠোপথ দিয়ে চলাচল করতে কি পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয় তা আমরা ছাড়া কেউ বুঝবে না। ভালো রাস্তা না থাকার কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভালো বিয়ে হয় না। মনে হয় আমরা সৃষ্টিকর্তার অভিশপ্ত মানুষ হয়ে এই অঞ্চলে জন্ম নিয়েছি।
নামা শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা আধুনিক চলাচল ব্যবস্থার অভাবে আমরা এই অঞ্চলের মানুষরা এখনো আদিম যুগে বসবাস করছি। এই মেঠোপথে কোন দিন কোন কর্মকর্তারা এসে খোঁজ নেননি। বিভিন্ন সময় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মেঠোপথের এবড়ো-থেবড়ো অংশগুলো মাটি দিয়ে লামছাম সংস্কার করা হয় মাত্র। আর ভোটের সময় এলেই জনপ্রতিনিধি আর নেতারা এসে শুধু আশ্বাসই শুনিয়ে যান। জানিনা শেখ হাসিনার ডিজিটাল আমলে আমাদের এই মেঠোপথে ইটের ছোঁয়া স্পর্শ করবে কিনা।
মিরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ মো: জিয়াউর রহমান মোবাইল ফোনে জানান ওই মেঠোপথে ইটবিছানো কিংবা পাকা করার মতো সামর্থ ইউনিযন পরিষদের নেই। কম বরাদ্দের মধ্যে রাস্তার যেখানে যেখানে সংস্কার করা প্রয়োজন তা করে আসছি আর ইট বিছানো কিংবা পাকা করার বিষয়ে এলজিইডি অফিস বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
শিকারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: রোকনুজ্জামান টুকু মোবাইল ফোনে জানান গত অর্থবছরে পরিষদের ছোট্ট বরাদ্দ দিয়ে মাটি কেটে নতুন করে রাস্তাটি সংস্কার করেছি। আর ইট বিছানো কিংবা পাকা করতে অনেক বড় অর্থের প্রয়োজন যা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব নয়। তাই উপর মহলকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
সদর উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন যখন যে বরাদ্দ আসে সেই বরাদ্দ দিয়ে আমরা সাধ্যমতো গ্রামীণ রাস্তাগুলোর আধুনিকায়নের কাজ করে আসছি। নামা শিকারপুরগ্রামের এই রাস্তায় ইতিমধ্যই মাটি কাটা হয়েছে। ইট বিছানা/পাকার জন্য আবেদন দেয়া হয়েছে অর্থ বরাদ্দ পেলেই রাস্তাটিকে আধুনিকায়ন করার কার্যক্রম শুরু করা হবে।
রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী মো: ইসমাইল হোসেন বলেন ইতিমধ্যই রাস্তার রাণীনগর উপজেলার অংশে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে নতুন করে মাটি কাটা হয়েছে। দ্রুতই সরেজমিনে পরিদর্শন করে রাস্তার আধুনিকায়নের জন্য যাবতীয় কার্যক্রম শুরু করা হবে।