৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৩য় ধাপে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায়। নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভোট না পাওয়ায় রাণীনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন।
গত বুধবার (২৯ মে) উপজেলার ৭০টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ শেষে রাতে বেসরকারী ভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম। এই ফলাফল ঘোষনা থেকে জানা যায় যে ১৩জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভোট না পাওয়ার কারণে জামানাত হারিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন নির্বাচন নীতিমালা অনুযায়ী প্রদত্ত ভোটের শতকরা পনের ভাগের এক ভাগ ভোট প্রার্থীকে পেতে হবে তা না হলে সেই প্রার্থী জামানত হারাবেন। উপজেলায় ৭০টি কেন্দ্রে মোট ১লক্ষ ৬২হাজার ৫জন ভোটারের মধ্যে ৬৭হাজার ৫শত ৬৬জন ভোটার ভোট প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে বৈধ ভোটের সংখ্যা ৬৪হাজার ৯শত ৫৪টি আর বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ২হাজার ৬শত ১২টি। শতকরা ভোট পড়েছে ৪১.৭০ভাগ। তাই নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী রাণীনগর উপজেলার প্রার্থীদের সর্বনিম্ম ভোট পেতে হবে ১০হাজার ১শত ৩৪টি। যদি কোন প্রার্থী নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভোটের কম ভোট পান তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন মোট নয়জন প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: মীর মোয়াজ্জেম হোসেন লিটন শালিক পাখি প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২৫০টি, সরদার মো: আব্দুল মালেক দোয়াত-কলম প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৪৯৮টি, মো: ইয়াকুব আলী প্রামাণিক হেলিকপ্টার প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৪৯২টি ভোট, মো: আসাদুজ্জামান টেলিফোন প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২৩৬৬টি, গোলাম রাব্বানী মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২৭২৪টি ভোট ও সুজিত চন্দ্র সাহা ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৯২৪১টি ভোট। তাই নির্বাচন নীতিমালা অনুযায়ী রাণীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী এই পাঁচজন প্রার্থী তাদের জামানত হিসেবে প্রতিজন ১লাখ করে টাকা আর ফেরত পাবেন না। যদিও বা ভোট গ্রহণের কিছুদিন আগে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: মীর মোয়াজ্জেম হোসেন লিটন নির্বাচন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সাবেক দুইবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব মো: আনোয়ার হোসেন হেলালের ছেলে নতুন মুখের তরুন প্রার্থী মো: রাহিদ সরদার কাপ-পিরিচ প্রতিকে ভোট ২৩৪৬৪ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে বিজয়ী হয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক তিনবারের এমপি মরহুম ইসরাফিল আলমের ভাতিজা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা আরেক নতুন মুখের তরুন প্রার্থী মো: আসাদুজ্জামান আসাদ কৈ মাছ প্রতিকে ভোট পেয়েছেন ১৪৫৪৮ ভোট। আর আনারস প্রতিক নিয়ে ১০৩৭৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন মো: আনোয়ার হোসেন বিএ।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৬৭হাজার ৫শত ৫৪। এর মধ্যে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ৬৩হাজার ৬৮৬ আর বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ৩হাজার ৮শত ৬৮। ভোটের শতকরা হার ৪১.৭০%। প্রদত্ত ভোটের হিসেবে প্রার্থীদের সর্বনিম্ন ১০হাজার ১শত ৩৩টি ভোট পেতে হবে তাহলে প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে না।
এই পদে মোট ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী মো: মামুন হোসেন বই প্রতীকে ৪৫৭৫টি ভোট, মো: তুষার বুলবুল টিয়া পাখি প্রতীকে ৫৬৯০টি ভোট, জাহাঙ্গীর আলম তালা প্রতীকে ৬৯৩০টি ভোট ও মো: মামুন হোসেন মাইক প্রতীকে ৭০৯৯টি ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
এই পদে চশমা প্রতিকে ১৬৪১৯ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে বিজয়ী হয়েছেন প্রদ্যুত কুমার প্রামাণিক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো: জার্জিস হাসান মিঠু টিউবয়েল প্রতিকে ১২০৪৮ ভোট পেয়েছেন। আর উড়োজাহাজ প্রতিকে ১০৯২৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন মো: সাদেকুল ইসলাম।
অপরদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন মোট পাঁচজন প্রার্থী। এই পদে সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৬৭হাজার ৫শত ৫১। মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ৬৪হাজার ৬শত ২৫ আর বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ২হাজার ৯শত ২৬। শতকরা ভোট পড়েছে ৪১.৬৯ভাগ।
নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী প্রার্থীদের সর্বনিম্ন ভোট পেতে হবে ১০হাজার ১শত ৩২টি ভোট। এই পদে নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী মোছা: মমতাজ বেগম (সাথী) ফুটবল প্রতীকে ৬৬১২টি ভোট, মোছা: বেদেনা বেগম কলস প্রতীকে ৪৭২৫টি ভোট ও দুইবারের ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা বেগম হাঁস প্রতীকে ৮১২৯টি ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
এই পদে পদ্ম ফুল প্রতিকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩২১৩৯ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে বিজয়ী হয়েছেন মোছা: রুমা বেগম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোছা: মর্জিনা প্রজাপ্রতি প্রতিক নিয়ে ১৩০২০ ভোট পেয়েছেন। আর হাঁস প্রতিকে ৮১২৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ফরিদা বেগম।