বরিশালের আগৈলঝাড়ায় তিন যুবককে মাদকসহ আটক করার নামে একটি ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় অভিযুক্ত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছে ভুক্তভোগী এক যুবক।
ভুক্তভোগী ও থানার সাধারণ ডায়েরির সূত্রে জানাগেছে, গত ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত অনুমানিক দশ ঘটিকার সময় উপজেলার বাকাল গ্রামের সুরেন্দ্র নাথ রায়ের পুত্র সুশান্ত রায় (৩৫) ও তার অপর দুই বন্ধু একই গ্রামের নারায়ন চন্দ্র শীলের পুত্র ইন্দ্রজিৎ শীল (৩৫) ও মৃত পরিতোষ চন্দ্র দাসের পুত্র গোপাল দাস (৩৫) সুশান্ত’র নিজ বাড়ি হইতে মোটর সাইকেল যোগে পয়সারহাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে আগৈলঝাড়া থানার সামনে পৌঁছালে রাস্তায় থাকা একটি ভ্যান গাড়ীর সাথে তাদের মোটর সাইকেলের সামান্য ধাক্কা লাগে। এতে কেউ আহত না হলেও সেখানে উপস্থিত থাকা আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের এসআই মোঃ মনিরুজ্জামান এবং তার সাথে থাকা দুই জন পুলিশ সদস্য তাদের বহনকারী মটর সাইকেলটির কাগজপত্র দেখাতে বলে। এ সময় তারা পুলিশকে জানায় বাড়ি হতে জরুরী কাজে বের হওয়ার কারনে গাড়ীর কাগজপত্র ভুল বসত সাথে আনতে পারেনি। গাড়ির কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারার পাশাপাশি কারো মাথায় হেলমেড না থাকায় তদের তিনজনকে মোটর সাইকেলসহ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিষষটি পরবর্তীতে বাড়িতে জানানো হলে সুশান্ত’র কাকা উত্তম দাস মটর সাইকেলের কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসে এবং পুলিশকে দেখায়। পুলিশ গাড়ীর কাগজপত্র সঠিক দেখতে পেয়ে হেলমেড ব্যবহার না করায় একটি মামলা দিয়ে তাদেরকে থানা থেকে মোটর সাইকেলসহ ছেড়ে দিলে তারা বাড়ি চলে যায়।
থানার সাধারণ ডায়েরির বরাত দিয়ে ভুক্তভোগী ওই তিন যুবক আরো জানান, ঘটনার পরের দিন অথাৎ ২৬ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে “টুডে বরিশাল” নামক অনলাইন পত্রিকা (অনলাইন পোর্টাল) এর তারা একটি সংবাদ দেখতে পান যেটি ওই অনলাইন পোর্টাল “টুডে বরিশাল” এর প্রতিনিধি সাংবাদিক তপন বসু তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেন। যাতে সংবাদ শিরোনাম করা হয় “আগৈলঝাড়ায় ইয়াবাসহ চার জন আটক ""অর্থের বিনিময় তিনজনকে ছাড়”। শেয়ার করা অনলাইন পোর্টালের লিংকের ভিতরে ঢুকে দেখতে পান ওই অনলাইন পোর্টাল “টুডে বরিশাল” এর প্রতিনিধি লিখেছেন “বরিশালের আগৈলঝাড়ায় পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ চার জনকে পুলিশ আটক করলেও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তিন জনকে ছেড়ে দিয়ে একজনের কাছ থেকে মাত্র দশ পিচ ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে শুক্রবার সকালে মামলা দায়ের করেন। অর্থের বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় শহর জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও লিখেন আগৈলঝাড়া থানার এসআই মনিরুজ্জামান ও এসআই মিল্টন সঙ্গীয় ফোর্সসহ বাকাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯০ (নব্বই) পিচ ইয়াবাসহ মাদক বিক্রেতা বাকাল গ্রামের বাসিন্দা থানার সামনের ব্যবসায়ি সুলতান আহমেদ এর ছেলে মুসফিকুর রহমান রিফাত (৩২), একই গ্রামের মৃত পরিতোষ দাসের ছেলে গোপাল দাস, নারায়ণ শীলের ছেলে ইন্দ্রজিৎ শীল ও মৃত সুরেণ রায়ের ছেলে সুশান্ত রায়কে গ্রেফতার করে। সূত্র মতে চার জনকে আটকের পর থানায় নিলে ওই মাদক ক্রেতা বিক্রেতাদের পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সুশান্ত রায়, ইন্দ্রজিৎ শীল ও গোপাল দাস নামের তিন জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও লিখেন থানার এসআই মনিরুজ্জামান বৃহস্পতিবার রাত সোয়া এগারটার দিকে থানা ব্রীজ সংলগ্ন দোকানের সামনে থেকে অভিযান চালিয়ে মুসফিকুর রহমান রিফাতকে আটক করে ১০পিচ ইয়াবা ও মাদক বিক্রির ১২ হাজার ২শ টাকা জব্দ করেন এবং তিনি বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
মাদকসহ আটক করার বিষয়ে আমরা তিন বন্ধু কিছুই জানি না। আমরা তিন বন্ধু মোটর সাইকেল চালিয়ে পয়সারহাট যেতে ছিলাম। উক্ত সাংবাদিক তাহার ব্যবহৃত মোবাইল ইলেক্ট্রিক ডিভাইস ব্যবহার করে আমাদের তিন বন্ধুর নামে তার অনলাইন পত্রিকায় মাদক ব্যবসায়ী উল্লেখ করে ইচ্ছাকৃত ভাবে এবং জ্ঞাতসারে আমাদেরকে হেয়, অপমান, অপদস্থ করার অভিপ্রায় মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে সংবাদ প্রকাশ করে। তার এই সংবাদ প্রকাশের ফলে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, কর্মক্ষেত্রে এবং সামাজিক ক্ষেত্রে মানম্মান ক্ষুন্ন করে হেয় প্রতিপন্য করেছে। যে কারনে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে, যার নং- ১৪৭১।
এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলম চাঁদ বলেন, থানার সামনের রাস্তায় একটি ভ্যান গাড়ীর সাথে চালকসহ তিন আরোহীসহ মোটর সাইকেলের সামান্য ধাক্কা লাগে। এ সময় এসআই মোঃ মনিরুজ্জামান এবং তার সাথে থাকা দুই জন পুলিশ সদস্য তাদের বহনকারী মটর সাইকেলটির কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা তাৎক্ষণিক গাড়ীর কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের মটর সাইকেলসহ থানায় নিয়ে আসা হয় এবং হেলমেট না থাকায় একটি মামলা দেয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের স্বজনরা থানায় এসে গাড়ীর কাগজপত্র দেখিয়ে মটর সাইকেলসহ তাদের নিয়ে যায়।
ইয়াবাসহ চার জনকে পুলিশ আটক করলেও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তিন জনকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে তিন যুবককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদের মাদকসহ তাদের আটক করা হয়নি।
মাদকসহ যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মাদক হামলা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন- যে সাংবাদিক এ সংবাদটি প্রকাশ করেছেন এটা তার মনগড়া, মিথ্যা-বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এ ব্যপারে ভুক্তভোগী এক যুবক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রকাশ করা ওই সংবাদের ব্যপারে ওই অনলাইন পোর্টাল “টুডে বরিশাল” এর প্রতিনিধি তপন বসুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়ায় তারা বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
একাত্তরের দেশ