কন্দন ফসল হিসেবে মিষ্টি আলু একটি অবহেলিত ফসল হলেও খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় মিষ্টি আলু চাষাবাদে ঝুকে পড়েছে কৃষকেরা।গাইবান্ধা সাঘাটা উপজেলাতে প্রতি বছরই চাষ করা হচ্ছে মিষ্টি আলু। এবারো মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং পাশাপাশি বাজারদর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা দারুণ খুশি। উপজেলার পদুমশহর, বোনারপাড়া, কচুয়া ও কামালের পাড়া ইউনিয়নের পতিত জমিতে মিষ্টি আলু চাষ বেশি হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি ) উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নে রাম নগরে করতোয়া নদীর বালুচরে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মিষ্টি আলু সবুজ পাতায় ছেয়ে আছে ফসলের মাঠ। কৃষকরা আগাম আলু কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আগলা করে দিচ্ছি , নারী ও শিশুরা আলু কুড়িয়ে এক জায়গায় স্তূপ করছে। দিনের শেষান্তে মিষ্টি আলু ক্ষেতে বসেই মেপে বস্তাবন্দি করছে কৃষকরা। অনেকেই আলুর লতার কাটিং সংগ্রহ করেছেন । কেউ আবার গবাদিপশুর জন্য যত্ন করে নিয়ে যাচ্ছে বাড়ি। সবমিলিয়ে কৃষকদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
এ ছাড়াও দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা হতে আগত বেপারী ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে মিষ্টি আলু। বেপারীরা জানায়, স্থানীয় বাজারগুলোর পাশাপাশি এসব মিষ্টি আলু গাইবান্ধা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। মিষ্টি আলু এখন অন্যান্য ফসলের মতোই একটি অর্থকরী ফসল। এটি স্বল্প খরচে সবচেয়ে বেশি লাভজনক একটি ফসল।
মিষ্টি আলু চাষ সম্পর্কে কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চারা রোপণ শুরু হয় এবং ফাল্গুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ক হয়ে উঠে এবং উফশী জাতের মিষ্টি আলু ৯০ দিনেই তোলা যায়। আর স্থানীয় উন্নত জাতের মিষ্টি আলু পরিপক্ক হতে প্রায় ৪ মাস সময় লাগে। আর এ আলু তোলা হয় চৈত্র ও বৈশাখ মাসে। যারা মিষ্টি আলু তুলে বোরো ধান রোপণ করতে চান, তারা বারি-৮ বারি-১২ জাতের মিষ্টি আলু চাষ করেন। আর যারা স্থানীয় উন্নত জাতের মিষ্টি আলু চাষ করেন। তারা আলু তুলে পাট চাষ করতে পারেন বলে জানান তিনি।
একই এলাকার মিষ্টি আলু চাষি
আঃখালেদ ও মোজম,বলেন এবারের মৌসুমে ৪০ শতাংশ ১ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। প্রতি শতাংশে ২ মণের বেশি মিষ্টি আলুর ফলন হয়েছে। ১ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু পেয়েছি পোষাশি মণের ওপরে। প্রতি মণ মিষ্টি আলু পাইকারি বিক্রি করছি ১ হাজার টাকা দরে। ১ বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বিক্রি করেছি ৮৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে তার লাভ হয় ৬০ হাজার টাকা, যা কিনা অন্য কোনো ফসল করে এত লাভ করা সম্ভব না।কৃষক শামছুল বলেন, আমি ৩২ শতাংশ জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। আমার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। আজ সেই আলুক্ষেত বিক্রি করলাম ৬০ হাজার টাকা। আমার কোনো খরচ নেই। যারা আলু কিনেছেন তারাই ক্ষেত থেকে তুলে নিয়ে যাবেন।
তিনি আনন্দের সহিত আরও বলেন, মিষ্টি আলু বিক্রি নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা ও পরিশ্রম করতে হয় না। জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে পাইকাররা এসে জমি থেকেই মিষ্টি আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের সময় ও অর্থ দুটোই বেঁচে যাচ্ছে বলে জানান।
সাঘাটা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রাকে বলেন, কন্দন ফষল হিসাবে মিষ্টি আলুর চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ উপজেলার চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ হয়েছে। বিশেষ করে কচুয়া ইউনিয়ন এর কচুয়া , চঞ্চলপাঠ উল্লাসোনাতলা, এলাকায় মিষ্টি আলুর চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । কৃষকরা ৩০ থেকে ৩৪ টাকা প্রতি কেজি ধরে বিক্রয় করতে পারছেন। কৃষকরা মিষ্টি আলু তুলে সেই জমিতে আবারো মিষ্টি আলুর লতার কাটিং চাষ করেছেন । সাঘাটা উপজেলার পতিত জমিতে আমরা চাষাবাদের আওতায় নিয়ে এসেছি । আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। বারি-৮ বারি-১২ জাতের মিষ্টি আলুসহ জাপানি জাতের মিষ্টি আলু এ উপজেলাতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিষ্টি আলু চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।