অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছর ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা তুলে ধরে এ কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা অধ্যাপক বলেন, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের শেষে দিকে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এখন থেকে সবাই মিলে এমন একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে পারি যে স্থানীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে এবং সব কেন্দ্রে প্রথমবারের ভোটাররা ১০০ শতাংশের এর কাছাকাছি সংখ্যায় ভোটদান নিশ্চিত করবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সাহস করতে পারবে না।
ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, আমাদের সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা সেটি বাস্তবায়নে প্রতিটি কমিশনই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের কথা আমি একটু আলাদাভাবে বলতে চাই, কেননা এই দুটি কমিশনের সুপারিশের ওপর প্রধানত নির্ভর করছে আমাদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তারিখ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ প্রসঙ্গে বড় খবর হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়ে গেছে। কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এখন থেকে তাদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত হলো ভবিষ্যৎ সরকার গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করার। তারা তাদের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। তাদের হাতে অনেক কাজ।
তিনি বলেন, প্রথমে সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। এটা এমনিতেই কঠিন কাজ। এখন কাজটা আরও কঠিন হলো, এজন্য যে গত তিনটা নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। ভোটার তালিকা যাচাই করার সুযোগ হয়নি কারও। গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছে তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা বড় কাজ।
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ-তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। অতীতে তাদের সে অধিকার এবং আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার সমস্ত আয়োজন করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের তরুণ-তরুণী ভোটাররা শতকরা ১০০ ভাগের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোট দিয়ে একটি ঐতিহ্য সৃষ্টি করুক। নির্বাচন কমিশন এবং সব সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার আহ্বান— সবাই মিলে আমরা যেন এই লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রকার সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করি।
নতুন ভোটার ছাড়াও যাদের আগে থেকে ভোটার তালিকায় নাম থাকার কথা ছিল তারা ভোটার তালিকায় আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ভুয়া ভোটারদের তালিকা থেকে বের করে দিতে হবে।
এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে চাই উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অতীতে আমরা এ ব্যাপারে অনেকবার আশ্বাসের কথা শুনেছি। এই সরকারের আমলে এটা যেন প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হয়, এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এর জন্য একটা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, সবকিছুই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এর সঙ্গে যদি আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে চাই, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুসারে নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে।
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি সব প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদের যদি, আবার বলছি “যদি”, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।