অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন,কাউকে তার মতের জন্য শত্রু মনে করব না। কাউকে ধর্মের কারণে শত্রু মনে করব না। আমরা সবাই সমান। কেউ কারো ওপরে না এবং কেউ কারো নিচে না, এই ধারণা আমরা জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস হলে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরসূরীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, পরিবারে মতভেদ থাকবে, বাগবিতণ্ডা হবে, কিন্তু আমরা কেউ কারও শত্রু হবো না। কাউকে তার মতের জন্য শত্রু মনে করবো না। কাউকে ধর্মের কারণে শত্রু মনে করবো না। আমরা সবাই সমান। কেউ কারও ওপরে না এবং কেউ কারও নিচে না এই ধারণা আমরা জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা, যার ফলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও পরিচিতি লাভ করেছে। দেশ স্বাধীন করার মহান ব্রত নিয়ে একাত্তারের ২৫ মার্চ রাত থেকে বাঙালি সেনারা সেনানিবাস ত্যাগ করে সশস্ত্রযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একই সঙ্গে এই দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-জনতা সাধারণ মানুষ সকলেই যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে যা একটি জনযুদ্ধে রূপ নেয়। আমাদের মা-বোনেরা মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ বিভিন্নভাবে যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চলমান রয়েছে। সময়ের আবর্তে অধিকাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা আজ বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপনকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী যে উদ্যোগ প্রতিবছর নিচ্ছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় এবং মুক্তবাতাসের রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, আমি তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা এখন থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এই দেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সকল ক্ষমতার উৎস হয়। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে একটি মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সমাদৃত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এই নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সব মানুষকে একটি বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। পরিবারে মতভেদ থাকবে, বাগবিতণ্ডা হবে, কিন্তু আমরা কেউ কারও শত্রু হবো না।
সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ বন্ধুত্ব বজায় রাখবে জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখব। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে পারস্পরিক সম্মান, আস্থা, বিশ্বাসও সহযোগিতা।
তিনি বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক শান্তি ও অর্থনীতি সুসংহতকরণে আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে। তাই, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।