স্বাধীনতা উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করছে স্বাধীনতা ভোজ ও গণবিবাহ অনুষ্ঠান। বিয়ের সব খরচ ওই হলের শিক্ষার্থীই বহন করবেন বলে জানা গেছে।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ‘স্বাধীনতা ভোজে’র পরে এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান গণবিয়ের আয়োজনকারী জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আল আমিন সরকার। এক্ষেত্রে পাত্রী যেকোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও পাত্রকে অবশ্যই জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী হতে হবে। গণবিয়েকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে পাত্রপাত্রী সন্ধানের হিড়িক পড়ে গেছে।
এদিন গণঅভ্যুত্থানে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ অর্জনকে আরও স্মরণীয় করতে, শিক্ষার্থীদের ‘ট্রমাটিক সিচুয়েশন’ কাটাতে ধীনতা ভোজ, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২ গ্রুপে দেওয়া এক পোস্টে এমন কথা জানানো হয়। গণবিয়েতে বর-কনেকে কোনো খরচ বহন করতে হবে না বলে জানানো হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনুমতি সাপেক্ষে ২০ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা ভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারণ করা হয়।
আল আমিন সরকার বলেন, ২০ সেপ্টেম্বর জহুরুল হলের স্বাধীনতা ভোজ ২.০ কে উপলক্ষ্যে গণবিবাহের আয়োজন করতে চাই। আপনারা যারা ক্যাম্পাসের পাত্রপাত্রী বিবাহ করতে ইচ্ছুক তারা চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। ওই দিনের সব খরচ আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা বহন করব ইনশাআল্লাহ। ফিল ফ্রি টু ইনবক্স মি।
তিনি আরও বলেন, পাত্র যেহেতু জহুরুল হক হলের হবে তাই প্রভোস্ট স্যার অনুমতি দেবেন বলে আশা করি।
গণবিয়ের এই উদ্যোগ গ্রহণের পরেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে। অনেক ছেলে ও মেয়ে তাদের সঙ্গী খুঁজে পেতে নিজের সিভি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিচ্ছেন। নিজের গুণাগুণ তুলে ধরে কেমন পাত্র বা পাত্রী প্রয়োজন সে চাহিদামতো পোস্ট দিচ্ছেন। আবার অনেক নারী শিক্ষার্থী জহুরুল হক হলে তাদের সঙ্গী খুঁজে পেতে চাহিদা অনুযায়ী পাত্রের সন্ধান চাচ্ছেন। সব ঠিকঠাক মিলে গেলে আগামী ২০ তারিখ তারা বিয়ের পিড়িতে বসবেন বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে সবাইকে হারাম সম্পর্কে জড়াতে দেখি। আমাকে অনেক ছেলেই প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে কিন্তু আমি হারাম সম্পর্কে জড়াতে চাই না। তাই আমি নিজের মনের মতো কাউকে পেলে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে করতে চাই।
বিয়ে প্রত্যাশী জহুরুল হক হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, নিঃসন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ। নিজের চরিত্রের হেফাজত করতে বিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাধান। অনেকেই সিভি দিচ্ছেন পছন্দের পাত্রের খোঁজে। তাদের মধ্য থেকে কাউকে পছন্দ হলে আমি আমার পরিবারকে জানিয়ে বিয়েটা করে নিতে চাই।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এমন গণবিয়ের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফারুক শাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলে একাডেমিক ইন্সটিটিউট, হল গণবিয়ের জায়গা না। আমরা এটার অনুমতি দিতে পারি না। আর এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা এখনো অনুমতি চাইতেও আসেনি। অনুমতি চাইলেও এমনটা সম্ভব না। তবে শিক্ষার্থীরা চাইলে অন্য কোথাও এটা আয়োজন করতে পারে।
অধ্যাপক ড. ফারুক শাহ আরও বলেন, একটি গণঅভ্যুত্থানের পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ট্রমাটিক সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে সেটা দূর করতে, শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ঠিক করতে, ক্লাসের জন্য প্রস্তুত করতে আমরা স্বাধীনতা ভোজের ব্যবস্থা করছি। এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার আয়োজনও থাকবে। দিনটিতে নবীন শিক্ষার্থীদের হলে বরণ করা হবে। তাছাড়া সিনিয়র শিক্ষার্থী যারা হল থেকে বিদায় নেবে তাদের জন্য বিদায় অনুষ্ঠানের মতোই।