বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে অনেক তারকা যেমন প্রতিবাদ করেছেন, তেমনি কেউ কেউ আবার সরকারের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দিয়েছেন। অনেক ছিলেন একেবারেই চুপ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আওয়ামীপন্থী তারকারা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। যারা নিরব ভুমিকায় ছিলেন তারাও আছেন সংকটে। কারো কারো নামে হয়েছে মামলা।
২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিনেত্রী তানভীন আহমেদ সুইটি, চিত্রনায়ক জায়েদ খান, অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় ও সাজু খাদেমসহ ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
আন্দোলনের সময় নীরব থাকায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে ক্ষমা চাইলেন অভিনেতা ও সঞ্চালক শাহরিয়ার নাজিম জয়। ভিডিও বার্তায় তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলা নিয়েও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন তিনি।
ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা না রাখতে পারায় তিনি জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। জয় বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা না রাখতে পারার জন্য জাতির কাছে আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাই। ক্ষমার চেয়ে বড় গুণ আর কিছু নাই। আপনারা নিশ্চয়ই আমাকে ক্ষমা করবেন। সব শিল্পীর উচিত তার অবস্থান পরিষ্কার করা।’
জয় জানান, ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়কের কাছে শিল্পীদের বিষয়ে জানতে চাইলে সেই সমন্বয়ক শিল্পীদের পরামর্শ দিয়েছেন জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার। জয় বলেন, ‘তিনি খুব সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, আপনাদের মাঝে অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা অন্যায় করেছেন। আপনারা আন্দোলনের সময় ছাত্রদের এ আন্দোলনকে সরকারের (আওয়ামী লীগ) হয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। অনেক রকম পোস্ট করেছেন আন্দোলন থামানো ও দমানোর জন্য। চেষ্টা করেছেন সরকারকে সহযোগিতা করার, সুবিধাভোগী হওয়ার। বাংলাদেশ টেলিভিশনে গিয়ে কেঁদেছেন অনেকেই, অথচ শত শত, হাজার হাজার স্টুডেন্ট রাস্তায় গুলি খেয়ে মারা গেছেন, কত মায়ের কোল খালি হয়েছে, অনেকেই তা বোঝেননি, বরং সরকারের চামচামি করেছেন। আপনারা মানুষের তোপের মুখে থাকবেন, ঘৃণার মুখে থাকবেন। আপনারা তো শিল্পী, মানুষ আপনাদের ভালোবাসে। আপনারা সবাই একত্রিত হয়ে জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন, ক্ষমা চান। ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আপনাদের আর কোনও পথ নেই।’ তবে সেই সমন্বয়কের নাম প্রকাশ করেননি জয়।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শাহরিয়ার নাজিম জয়সহ ৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। ভিডিও বার্তায় এ বিষয়েও কথা বলেন জয়। তিনি বলেন, ‘আমার নামে বেগম খালেদা জিয়ার হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। আমি মামলার এজাহার পড়েছি, যেখানে লেখা আছে—২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় অনেকের সঙ্গে আমিও ছিলাম। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা করেছি, তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি।’
জয় জানান মামলার এজহারে যে সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে সময় তিনি নাটকের শুটিংয়ে নেপালে অবস্থান করছিলেন। আত্মপক্ষ সমর্থন করে জয় বলেন, ‘মামলার ঘটনায় খুব দুঃখ পেয়েছি। জীবনে কখনও কাউকে গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পাইনি। কারও সঙ্গে ঝগড়া বিবাদেও যাইনি। সেখানে এমন একটি ঘটনায় আমি মর্মাহত। আমার পরিবারের মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল আমি শুটিংয়ের কাজে নেপালে ছিলাম। আমার পাসপোর্টেও বিষয়টি উল্লেখ আছে। সেদিন সকাল ১১টার ফ্লাইটে নেপালে যাই। সেসময় নেপালে একটি বড় ভূমিকম্প হয়। যে ভূমিকম্পে আমি, রুনা খানসহ অনেকেই আটকা পড়ি। ২৬ এপ্রিল আমরা দেশে ফিরে আসি। সেই কাগজপত্রগুলো আমার কাছে সব আছে।’