সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে প্রাণহানির খবরও পাওয়া গেছে। রোববার (৪ আগস্ট) শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এরমধ্যে সিরাজগঞ্জে ২১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জেলার এনায়েতপুর থানার ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, ফেনী ৫, নরসিংদী ৬, কিশোরগঞ্জ ৪, লক্ষ্মীপুর ৮, মাগুরা ৪, রংপুর ৪, মুন্সীগঞ্জ ৩, বগুড়া ৩, কুমিল্লা ৩, সিলেট ২, শেরপুর ২ এবং ভোলা, জয়পুরহাট ও বরিশালে একজন করে নিহত হয়েছেন।

এছাড়া, রাজধানীর সাইন্সল্যাব, ফার্মগেট ও শাহবাগে এখন পর্যন্ত সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, একজন হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ঢুকে তেরো জন পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

নরসিংদী: নরসিংদীর মাধবদিতে আন্দোলনকারীদের গণপিটুনিতে আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া জেলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, মাধবদী থানার চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন (৩৬), সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোটভাই ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেব দেলু, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান ভুইয়া (৪৫), পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের সদস্য বাবুল, আওয়ামী লীগের কর্মী কামাল মিয়া (৪৫)।

ফেনী: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ফেনীর মহিপালে গুলিতে ৫ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে ৫০ জন। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসিফ ইকবাল ৫ জনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আশংকাজনক অবস্থায় অনেককে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে।

মাগুরা: দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিতে মেহেদী হাসান রাব্বি নামে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত রাব্বি মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও, সংঘর্ষে সুমন শেখ, ফরহাদ নামের ২ যুবক মারা গেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। তাছাড়া, জেলায় সংঘর্ষে আরও একজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
একপর্যায়ে সংঘর্ষে দু’জন মারা যান। তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে টিয়ারশেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাছাড়া, জেলায় সংঘর্ষে আরও একজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

পাবনা: সহিংসতায় পাবনাতেও মারা গেছেন দু’জন। জেলা শহরের চাতিকমোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভের সময় বিরোধী পক্ষের সাথে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে দু’জন প্রাণ হারায়। আহত হয় অন্তত ৩০ জন। প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এসএম রুমি।

বগুড়া: বগুড়া সদর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় পুলিশের গুলিতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। নিহতের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুপচাঁচিয়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল ইসলাম (২২)। তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদরের বদলগাছীর বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের বীরকেদার দক্ষিণপাড়া গ্রামে। অন্যজনের নাম জিল্লুর রহমান (৪৫)। তাঁর বাড়ি গাবতলী উপজেলায়। অন্য দুজনের বয়স আনুমানিক ৬০ ও ৩৫ বছর।
এছাড়াও বগুড়ার সদরের বড়গোলা এলাকায় বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে আহত হয় আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক যুবক। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার নাম আবদুল লতিফ বলে জানা গেছে। তার বাড়ি শহরের গয়লা এলাকায়। এছাড়াও জেলায় ১৩ জন পুলিশ সদস্যসহ ২১ জন নিহত হয়েছেন।

বরিশাল:বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে টুটুল চৌধুরী (৬২) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। জানা গেছে, নিহত টুটুল চৌধুরী বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।