‘সিঁধু-কানুহু স্মরণে ভয় করি না মরণে’ এই শ্লোগানে গাইবান্ধায় সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালন করা হয়েছে।
গত রোববার (৩০ জুন) সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসের ১৬৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন, শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভুমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।
রবিবার দুপুরে জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকা থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভুমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গণেশ মুর্মুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিধি ছিলেন, আদিবাসী গবেষক ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী।
সমাবেশে বক্তব্য দেন, আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন, আদিবাসী গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সভাপতি শেখ নাছির উদ্দিন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ সামিউল আলম রাসু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি গাইবান্ধা জেলা সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল গাইবান্ধা জেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক মৃনাল কান্তি বর্মন, কৃষক সমিতির জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম প্রধান, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভুমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সহ-সভাপতি আজমল হোসেন মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, মিনহাজুল ইসলাম, আতাউর রহমান সাবু, আরিফুল ইসলাম মিজান, মোহালাইল ইসলাম প্রধান, আদিবাসী নেতা রুমিলা কিস্কু, জামিন হেমব্রম, বিমল বেশারা, থমাস হেমব্রম প্রমুখ।
বক্তারা সাঁওতালদের তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড না করার জোর দাবি জানান। পাশাপাশি সাঁওতালদের উপর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মে আদিবাসী পল্লীতে হামলাকারী দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
বক্তারা, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর নিহত ৩ সাঁওতালের হত্যার বিচারের দাবি জানান। সেইসাথে বাগদা ফার্মের সাঁওতালদের জমি ফিরিয়ে দেয়ার আহবান জানান।
এরআগে ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উপলক্ষে সিঁধু, কানহু, চাঁদ, ভৈরব, ফুলমনি, যানো কিসকুসহ সাঁওতাল বিদ্রোহের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
অপর দিকে, রবোবার দুপুর ১২টার দিকে গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির অপর একটি গ্রুপ, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ, এএলআরডি ও জনউদ্যোগ গাইবান্ধার ব্যানারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শুরুতে বর্ণাঢ্য একটি শোভাযাত্রা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, রাজনৈতিক ও ক্রীড়াবিদ ওয়াজিউর রহমান রাফেল, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের জেলা আহবায়ক এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, আদিবাসী নেতা বার্নাবাস টুডু, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর কবীর তনু, মানবাধিকার কর্মী অঞ্জলি রানী দেবী, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের সদর উপজেলার সদস্য সচিব কাজী আব্দুল খালেক, ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির নেতা ময়নুল হোসেন,আদিবাসী নেতা প্রিসিলা মুর্মু, গৌড় চন্দ্র পাহাড়ী, মার্থিয়াস মার্ডি, সুচিত্রা মুরমু তৃষ্ণা, অলিভিয়া হেমব্রম ও সুফল হেমব্রম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৮৫৫ সালে ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়। সেই বিদ্রোহে নিহত হন সাঁওতাল নেতা সিধু-কানুসহ ১০ হাজারেরও বেশি সাঁওতাল। তখন থেকে সাঁওতালরা প্রতিবছর ৩০ জুন সাঁওতাল ‘হুল’ বা বিদ্রোহ দিবস পালন করে আসছে।
এ জাতীয় আরো খবর..