টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বৃষ্টি আইনে (ডিএলএস মেথড) হেরেছে টাইগাররা। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ডিএলএস মেথডে ২৮ রানের জয় পেয়েছে অজিরা।
গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচের তিনটিতে জয়ে বড় অবদান ছিল বোলারদের। ব্যর্থতার বৃত্তে ছিল ব্যাটাররা। এবার সুপার এইটে এসে ব্যর্থ তাসকিন আহমেদ-মুস্তাফিজুর রহমানরা। তাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নূন্যতম লড়াইটুকুও করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ১৪১ রানের লক্ষ্যে নেমে অজিরা ১১.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১০০ রান তোলে। শেষ পর্যন্ত ডিএলএস পদ্ধতিতে ২৮ রানে হেরেছে শান্তরা।
শুক্রবার (২১ জুন) স্যার ভিভিয়ান রিচার্ড স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নাজমুল হাসান শান্তর ৩৬ বলে ৪১ রান এবং হৃদয়ের ২৮ বলে ৪০ রানের ইনিংসে ভর করে ১৪০ রানের পুঁজি দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
জবাবে খেলতে নেমে ১১ ওভার ২ বলে ২ উইকেট হারিয়ে ১০০ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। এরপর বৃষ্টিতে আর খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অজিদের হয়ে অপরাজিত ৫৩ রান করেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। বাংলাদেশের হয়ে ২৩ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন রিশাদ হোসেন।
রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই বাংলাদেশকে চোখ রাঙায় অস্ট্রেলিয়া। পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে তুলে নেয় ৫৯ রান। দুই প্রান্ত থেকেই রান বের করতে থাকেন ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। তবে এরপর নামে বৃষ্টি, বন্ধ থাকে খেলা।
বৃষ্টি থামতেই উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। রিশাদ হোসেনের হাত ধরে আসে প্রথম উইকেট। নিজের প্রথম ওভারেই ফেরান ট্রাভিস হেডকে। ২১ বলে ৩১ রানে বোল্ড করেন এই অজি ওপেনারকে। ৬.৫ ওভারে ৬৫ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পেতে অবশ্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। নিজের পরের ওভার করতে এসে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মিচেল মার্শকেও ফেরান রিশাদ। ৮.৫ ওভারে ৬৯ রানে হয় দ্বিতীয় উইকেটের পতন। ৬ বলে ১ রান করে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মার্শ।
তবে গলার কাঁটা হয়ে তখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে ডেভিড ওয়ার্নার। ইনিংসে তৃতীয়বার বৃষ্টি নামার আগেই পূরণ করেন ফিফটি। বৃষ্টি নামলে মাঠ ছাড়েন ৩৫ বলে ৫৩ রানে। সাথে ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত ছিলেন ৬ বলে ১৪ নিয়ে।
তখনই জানা যায়, বৃষ্টির কারণে খেলা আর মাঠে না গড়ালে বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে জয় পাবে অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত আর খেলা না হওয়ায় এই ব্যাবধানেই জিতে যায় সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। হার দিয়েই সুপার এইট শুরু বাংলাদেশের।
এর আগে, তাওহীদ হৃদয় আর নাজমুল শান্তের ব্যাটে মান বাঁচায় বাংলাদেশ। দু’জনেই খেলেন চল্লিশোর্ধ রানের ইনিংস। তবে সতীর্থদের ব্যর্থতায় আশানুরূপ পুঁজি আসেনি স্কোরবোর্ডে। ৮ উইকেটে তোলে ১৪০ রান। বিপরীতে আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক তুলে নেন প্যাট কামিন্স।
টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রানের খাতা খোলার আগে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। স্টার্কের টানা তিন ইয়র্কারের প্রথম দুটি কোনো রকম আটকে দিলেও তৃতীয়টা আর পারেননি তানজিদ তামিম। ফেরেন ৩ বলে ০ রানে।
তামিম ফেরার পর জুট বাঁধেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্ত শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেললেও লিটন শুরু করেন ধীরে সুস্থে। দশম বলে খোলেন নিজের রানের খাতা। পাওয়ার প্লেতে দু’জনে ৩৯ রান এনে দেন দলকে।
৮ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৭/১। ততক্ষণে জমে গেছে দু’জনের জুটি। এরপর যখন কিনা বড় সংগ্রহের পথে ছুটবে দল, তখনই উইকেট বিলিয়ে ফেরেন লিটন। ২৫ বলে ১৬ রান করে আউট হন এডাম জাম্পার বলে।
এদিকে রানে ফিরলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। লিটন দাসের পর বাংলাদেশ অধিনায়ককেও ফিরিয়েছেন জাম্পা। সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি। বাংলাদেশ অধিনায়কের ইনিংস শেষ হয় ৩৬ বলে ৪১ রানে।
মাঝে সবাইকে চমকে দিয়ে মাঠে এলেও চমক দেখাতে পারেননি রিশাদ হোসাইন। ৩ বলে ২ রানেই শেষ হয় তার ইনিংস। সাকিবও ফেরেন দ্রুত। শান্ত ফেরার পর যখন কিনা হাল ধরবেন দলের, তখন ১০ বলে ৮ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
এদিন মাহমুদউল্লাহ পারেননি থিতু হতেই। ১৭.৫ ওভারে এই ব্যাটার ফেরেন ২ বলে ২ রানে। পরের বলে ফেরেন শেখ মেহেদীও। দু’জনকেই ফেরান প্যাট কামিন্স। পরের ওভারে এসে প্রথম বলে তাওহীদ হৃদয়কে ফেরালে হ্যাটট্রিক পূরণ হয় তার।
আউট হওয়ার আগে অবশ্য তাওহীদ হৃদয় দলকে পৌঁছে দেন বলার মতো অবস্থানে। দিয়ে যান মান বাঁচানো পুঁজি। তার ২৮ বলে ৪০ রানের ইনিংসে ভর করেই ৮ উইকেটে ১৪০ রান আসে স্কোরবোর্ডে। শেষ দিকে তাসকিন করেন ৭ বলে ১৩* রান।