কপালের কেন্দ্রে গোলাকার টিপ যেমন নারী সৌন্দর্যের প্রতীক হতে পারে, তেমনই কেন্দ্র থেকে তার সামান্যতম বিচ্যুতি তাঁর ভাল না থাকার ইঙ্গিতও দিতে পারে। হয়ে উঠতে পারে ‘নির্যাতন’-এর প্রতীক। আর এই টিপকেই নির্যাতনের প্রতিবাদে হাতিয়ার করে নিয়েছেন বাংলাদেশের মহিলা সমাজের একাংশ।
বিগত কয়েক দিন সমাজমাধ্যম ঘাঁটলেই চোখে পড়েছে বাংলাদেশি মহিলাদের নিজস্বী (বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাদা-কালো)। কপালে লাল টিপটি যথাস্থান থেকে একটু সরেছে। সঙ্গে হ্যাশট্যাগ হিসেবে লেখা ‘অড ডট সেল্ফি’। সাধারণ মহিলাদের সঙ্গে এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন জয়া আহসান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও নুসরত ইমরোজ তিশার মতো সে দেশের অভিনেত্রীরা। সময়ের সঙ্গে এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন সে দেশের একাধিক সমাজমাধ্যম প্রভাবী ও সাধারণ মহিলারা।
ই উদ্যোগে যে নিজস্বী সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লেখা হচ্ছে, ‘‘বাংলাদেশে প্রতি তিন জনে এক জন নারী ঘরে-বাইরে নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার। প্রতি বছর ক্রমেই নারী নির্যাতনের এই হার বেড়ে চলেছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সবাই মিলে প্রতিবাদ হচ্ছে না।
কারণ, আমাদের সমাজে নারীদের শেখানো হয় চুপচাপ নীরবে সহ্য করতে। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন?’’ এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ‘মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন’। সম্প্রতি নারী দিবসকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে এই উদ্যোগশুধু বাংলাদেশ নয়, জয়ার মতে, ভারতীয় উপমহাদেশে নারীদের উপর খুব ‘বড়’ নির্যাতনের ঘটনা না ঘটলে প্রতিবাদের স্রোত তৈরি হয় না।
তিনি বললেন, ‘‘অন্যথায় যেন ধরে নেওয়া হয় যে, নির্যাতন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। অনেক সময়ে সংবাদমাধ্যম নীরব থাকে। ফলে আমরাও ভুলে যাই।’’ নির্যাতনের প্রতিবাদের ইচ্ছে থাকলেও সমাজের সব মহিলা তা করতে পারেন না বলেই মনে করেন জয়া। তাঁর কথায় একটা সময় পরিবার ও নির্যাতিতার অসম্মানের ভয়ে শেখানো হত মুখ না খুলতে। কিন্তু এখন সেই দিন আর নেই।
তবে নির্দিষ্ট কোনও দিন বা ‘নারীবাদ’ নিয়ে আলাদা করে জয়ার কোনও উৎসাহ নেই। বছরের প্রতিটা দিনই তিনি নারীদের জন্য উদ্যাপন করতে চান। তাঁর যুক্তি, ‘‘যার জন্য ৮ মার্চ আমি আলাদা করে কিছু সমাজমাধ্যমে পোস্টও করি না।’
সম্প্রতি বাংলাদেশে হাতিদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে আদালতে একটি মামলা করেছিলেন জয়া। আদালত তাঁর আবেদনের পক্ষেই রায় দিয়েছে। তবে ‘অড ডট সেল্ফি’ প্রসঙ্গে জয়া বললেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্যই এ রকম একটা উদ্যোগে অংশ নেওয়া যেতে পারে। তাঁদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার একটা প্রকাশ মাত্র। তবে বিষয়টা নিয়ে আলাদা কোনও প্রচার আমি করতে চাই না।
জয়ার আশা, আগামী দিনে এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের সীমা অতিক্রম করে ভারত, পাকিস্তান-সহ পড়শি দেশেও ছড়িয়ে পড়বে।